একজন আব্দুল বারিক
আমরা চেতনাধারী...!!
মুক্তিযোদ্ধা কোটায়, আমরা হাজার হাজার ছেলেমেয়ে নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি, গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি করি, অফিসের বিলাসবহুল কামরায় ইজি-চেয়ারে দোল খাই।
এখানেই শেষ নয়, মানুষটা (মুক্তিযোদ্ধা) মরে যাবার পরেও আমরা প্রতি মাসে একটা নির্দিষ্ট অংকের ভাতা গ্রহণ করি শুধু তারই মহৎ কর্মগুনে।
এক কথায়, মরে গিয়েও সে তার আপনজনদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন।
প্রতি বছর বিশেষ বিশেষ দিবসে আমরা তাদের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাই, মৃতদের আত্মার শান্তি কামনা করি।
তবে,
যারা বেঁচে আছে, তাদের খবর রাখিনা।
তারা কিভাবে বেঁচে আছে, বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে, ঠিকমত দুবেলা খাবার পাচ্ছে কি পাচ্ছে না, সে খেয়ালটুকুও আমরা নেই না।
এমনও পরিবার আছে, যেই পরিবারের সন্তানেরা মুক্তিযোদ্ধা কোটায় বড় মাপের চাকরি করে, আর তার বাবার ঘরে নুন আনতে পান্তা ফুরায়।
বাহ...!!
মা-বাবাকে আলাদা করে দিয়ে তাদের বানানো সিঁড়ি বেয়ে আমরা তরতর করে উপরে উঠি। আর তাদের অবদান ভুলে যাই।
চোখের জলে সিঁড়ির কারিগরটা গড়াগড়ি খায় সিঁড়ির তলাতেই।
তবুও আমরা চেতনাধারী...!!
আব্দুল বারিক...
একজন মুক্তিযোদ্ধা...
বাঙালী জাতির ইতিহাসে সেরা নায়কদের একজন।
যার পায়ের ছেঁড়া জুতাটাও আমাদের মাথার কাছে তুলে রাখার মত মর্জাদাপূর্ণ।
অথচ, ইতিহাসের সেই মহান নায়কই রাস্তার মোড়ে ছেঁড়া চটে বসে দিনভর আমাদের জুতা সেলাই করছেন।
তাও শুধু বেঁচে থাকার সংগ্রামে।
আমরা অধমেরা নিঃস্বার্থে তার মুখে একমুঠো ভাত তুলে দিতে পারছি না।
জীবন সীমান্তের একেবারে কাছাকাছি এসেও তিনি সুখটাকে সেভাবে ছুঁয়ে দেখতে পারেননি, যেভাবে আমরা তার দোহাই দিয়ে অবিরাম ভোগ করে যাচ্ছি অনাবিল সুখ।
তবুও আমরা চেতনাধারী...!!
আজ আমরা বর্তমান।
আমাদের পরে আরেক প্রজন্ম আসবে।
সেও আব্দুল বারেকের দোহাই দিয়ে লাখো জনতার ভীর ঠেলে এগিয়ে যাবে সুখ কুড়াতে।
তারপর আরেক প্রজন্ম আসবে... আর, এভাবেই চলতে থাকবে বিরামহীন।
আমরা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম পাড় হবো।
অনেক গুনী মানুষ জন্মাবে বাংলার এই মুক্ত বাতাসে।
যে বাতাস ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে ছড়িয়ে দিয়েছিলো এই আব্দুল বারিকেরা।
আমরা একদিন তাদের ভুলে যাবো।
তাদের অভাবটুকুও হয়তো আমাদের বোধগম্য হবে না।
তবে, অভাবটা চিরকাল বুকে আগলে রাখবে রক্তে রঞ্জিত এদেশের মাটির প্রত্যেকটি কনা।
যখন থেকে তার বুকে আর কখনো জন্ম নেবেনা একাত্তরের আব্দুল বারিক, আর তার লাখো-কোটি সহোদর।