সালমান শাহ এর জীবন কাহিনী


আজ কথা বলব সেই লেজেন্ড সালমানের যে সালমান হুট করে এসে কোটি মানুষের মন জয় করে হুট করেই কাঁদিয়ে চলে গিয়েছিলেন 
সালমান শাহ ১৯৭১ সালে সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে এসে হয়ে যান ‘সালমান শাহ’। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায় । যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’ । নানার মুলবাড়ি ছিল মৌলভিবাজারে। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।


১৯৮৫/৮৬ সালের দিকে হানিফ সংকেতের গ্রন্থনায় কথার কথা নামে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারিত হত। এর কোন একটি পর্বে ‘নামটি ছিল তার অপূর্ব’ নামের একটি গানের মিউজিক ভিডিও পরিবেশিত হয়। হানিফের সংকেতের স্বকন্ঠে গাওয়া এই গান এবং মিউজিক ভিডিও দুটোই অনুষ্ঠানের জন্য বিশেষভাবে নির্মিত। একজন সম্ভাবনাময় সদ্য তরুন তার পরিবারের নানারকমের ঝামেলার কারনে মাদকাসক্ত হয়ে মারা যায়, এই ছিল গানটার থিম। গানের প্রধান চরিত্র অপূর্বর ভূমিকায় অভিনয়ের মাধ্যমেই সালমান শাহ মিডিয়াতে প্রথম আলোচিত হন। তখন অবশ্য তিনি ইমন নামেই পরিচিত ছিলেন। মিউজিক ভিডিওটি জনপ্রিয়তা পেলেও নিয়মিত টিভিতে না আসার কারনে দর্শক আস্তে আস্তে ইমনকে ভুলে যায়। আরও কয়েক বছর পর অবশ্য তিনি আব্দুল্লাহ আল মামুনের প্রযোজনায় পাথর সময় নাটকে একটি ছোট চরিত্রে এবং কয়েকটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও কাজ করেছিলেন।

শাহরুখ খান এবং সালমান শাহ 
এক নজরে সালমান শাহ

আসল নাম : চৌধুরী সালমান শাহরিয়ার ইমন
জন্ম : ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭১, রবিবার
বাবা : কমর উদ্দিন চৌধুরী
মা : নীলা চৌধুরী
স্ত্রী : সামিরা
উচ্চতা : ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি
রাশি : বৃশ্চিক
প্রথম চলচ্চিত্র : কেয়ামত থেকে কেয়ামত
শেষ ছবি : বুকের ভেতর আগুন
প্রথম নায়িকা : মৌসুমী
সর্বাধিক ছবির নায়িকা : শাবনূর (১৪টি)
মোট ছবি : ২৭টি
বিজ্ঞাপনচিত্র : মিল্ক ভিটা, জাগুরার, কেডস, গোল্ড স্টার টি, কোকাকোলা, ফানটা।
ধারাবাহিক নাটক : পাথর সময়, ইতিকথা
একক নাটক : আকাশ ছোঁয়া, দোয়েল, সব পাখি ঘরে ফেরে, সৈকতে সারস, নয়ন, স্বপ্নের পৃথিবী।
মৃত্যু : ৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৯৬, শুক্রবার

সালমান শাহ অভিনীত ছবির তালিকা

ছবির নাম ও ছবি মুক্তির তারিখ:
  • কেয়ামত থেকে কেয়ামত – ১৯৯৩ সালের ২৫ মার্চ
  • তুমি আমার – ১৯৯৪ সালের ২২ মে
  • অন্তরে অন্তরে – ১৯৯৪ সালের ১০ জুন
  • সুজন সখী – ১৯৯৪ সালের ১২ আগস্ট
  • বিক্ষোভ – ১৯৯৪ সালের ৯ সেপ্টেম্বর
  • স্নেহ – ১৯৯৪ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর
  • প্রেমযুদ্ধ – ১৯৯৫ সালের ২৩ ডিসেম্বর
  • কন্যাদান – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • দেনমোহর – ১৯৯৫ সালের ৩ মার্চ
  • স্বপ্নের ঠিকানা – ১৯৯৫ সালের ১১ মে
  • আঞ্জুমান – ১৯৯৫ সালের ১৮ আগস্ট
  • মহামিলন – ১৯৯৫ সালের ২২ সেপ্টেম্বর
  • আশা ভালোবাসা – ১৯৯৫ সালের ১ ডিসেম্বর
  • বিচার হবে- ১৯৯৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি
  • এই ঘর এই সংসার – ১৯৯৬ সালের ৫ এপ্রিল
  • প্রিয়জন – ১৯৯৬ সালের ১৪ জুন
  • তোমাকে চাই – ১৯৯৬ সালের ২১ জুন
  • স্বপ্নের পৃথিবী – ১৯৯৬ সালের ১২ জুলাই
  • সত্যের মৃত্যু নেই – ১৯৯৬ সালের ৪ অক্টোবর
  • জীবন সংসার – ১৯৯৬ সালের ১৮ অক্টোবর
  • মায়ের অধিকার – ১৯৯৬ সালের ৬ ডিসেম্বর
  • চাওয়া থেকে পাওয়া – ১৯৯৬ সালের ২০ ডিসেম্বর
  • প্রেম পিয়াসী – ১৯৯৭ সালের ১৮ এপ্রিল
  • স্বপ্নের নায়ক – ১৯৯৭ সালের ৪ জুলাই
  • শুধু তুমি – ১৯৯৭ সালের ১৮ জুলাই
  • আনন্দ অশ্রু – ১৯৯৭ সালের ১ আগস্ট 
  • বুকের ভেতর আগুন – ১৯৯৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর

ইমন থেকে 'সালমান শাহ' হয়ে ওঠার গল্প:

 সালমান শাহ 

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ধ্রুব তারা হয়ে সবার মনে সিংহাসনে আসন গড়ে নিয়েছিলেন ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক সালমান শাহ। সালমান চলে গেছেন ওই দূর আকাশে। কখনোই ফিরে আসবেন না। টিভি সেটের সামনে বসে প্রিয় নায়কের ছবি দেখে নীরবে, নিভৃতে হয়তো অনেকেরই দু’ফোঁটা অশ্রু চোখের কোণে ঝিলিক দিয়ে ওঠে।

কর্মমুখর এফডিসি, চলচ্চিত্র শিল্পের ২০টি বছর কেটে গেল বাংলা চলচ্চিত্রের নক্ষত্র সালমান শাহকে ছাড়া। ৬ সেপ্টেম্বর ছিল অমর এই নায়কের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। সালমান শাহ বাংলাদেশের ১৯৯০-এর দশকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নায়ক। প্রকৃত নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন। ৫ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতার এই অভিনেতা সর্বমোট ২৭টি চলচ্চিত্র অভিনয় করেন। এছাড়াও টেলিভিশনে তার অভিনীত গুটি কয়েক নাটক প্রচারিত হয়।

১৯৯৩ সালে তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত কেয়ামত থেকে কেয়ামত মুক্তি পায়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনের অভিষেক হয়। জনপ্রিয় এই নায়ক নব্বইয়ের দশকের বাংলাদেশে সাড়া জাগানো অনেক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

সালমান শাহ্‌ ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর,সিলেট জেলায় অবস্থিত জকিগঞ্জ উপজেলায় জন্মগ্রহণ করেন, এবং তাঁর রাশি ছিল বৃশ্চিক। তাঁর পিতা কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। তিনি পরিবারের বড় ছেলে। যদিও তাঁর মুল নাম শাহরিয়ার চৌধুরী ইমন, কিন্তু চলচ্চিত্র জীবনে তিনি সবার কাছে 'সালমান শাহ' বলেই পরিচিত ছিলেন। সালমান শাহ ১২ আগস্ট ১৯৯২ বিয়ে করেন, এবং তাঁর স্ত্রীর নাম সামিরা।

প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক সোহানুর রহমান সোহানের হাত ধরে সালমান শাহ চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সু্যোগ পান। প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আনন্দ মেলা তিনটি হিন্দি ছবি 'সনম বেওয়াফা' 'দিল' ও 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' এর কপিরাইট নিয়ে সোহানুর রহমান সোহানের কাছে আসে এর যে কোন একটির বাংলা পুনঃনির্মাণ করার জন্য কিন্তু তিনি উক্ত ছবিগুলোর জন্য উপযুক্ত নায়ক-নায়িকা খুঁজে না পেয়ে সম্পূর্ণ নতুন মুখ দিয়ে ছবি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন। নায়িকা হিসেবে 'মৌসুমী' কে নির্বাচিত করলেও নায়ক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। তখন নায়ক আলমগীরের সাবেক স্ত্রী খোশনুরের মাধ্যমে 'ইমন' নামে একটি ছেলের সন্ধান পান।

প্রথম দেখাতেই তাকে পছন্দ করে ফেলেন পরিচালক এবং সনম বেওয়াফা ছবির জন্য প্রস্তাব দেন, কিন্তু যখন ইমন 'কেয়ামত সে কেয়ামত তক' ছবির কথা জানতে পারেন তখন তিনি উক্ত ছবিতে অভিনেয়র জন্য পীড়াপীড়ি করেন। তাঁর কাছে কেয়ামত সে কেয়ামত তক ছবি এতই প্রিয় ছিলো যে তিনি মোট ২৬ বার ছবিটি দেখেছেন বলে পরিচালক কে জানান। শেষ পর্যন্ত পরিচালক সোহানুর রহমান সোহান তাঁকে নিয়ে কেয়ামত থেকে কেয়ামত চলচ্চিত্রটি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং ইমন নাম পরিবর্তন করে সালমান শাহ রাখা হয়।

সালমান শাহ মৃত্যুর আগে মন মানে না ছবির ৫০% কাজ শেষ করতে পেরেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর চিত্রনায়ক রিয়াজ কে দিয়ে ছবিটি করানো হয়।

সালমান শাহ মোট ২৭ টি ছবিতে অভিনয় করেন। সবচেয়ে বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন নায়িকা শাবনূরের সঙ্গে জুটি বেধে (মোট ১৪ বার)। সালমান শাহকে নিয়ে একটি ছবি প্রযোজনা করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেতা খলিল। মালেক আফসারির পরিচালনায় ছবিটির নাম ‘এই ঘর এই সংসার’।

১৯৯৬ সালের ৬ই সেপ্টেম্বর কোটি ভক্তকে কাঁদিয়ে পরপারে চলে যান সালমান শাহ। রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাস ভবনে সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় তাঁর লাশ পাওয়া যায়। ময়না তদন্ত রিপোর্টে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হলেও তাঁর মৃত্যু নিয়ে রহস্য এখনো কাটেনি।

অনেকেই সালমান শাহ-এর মৃত্যুর জন্য তাঁর স্ত্রী সামরার দিকে অভিযোগের আঙুল তোলেন, এমনকি পরবর্তীকালে সালমানের পরিবারের পক্ষ থেকে স্ত্রী সামিরা ও আরো কয়েকজন কে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয় কিন্তু পরে এই মামলার আর কোন অগ্রগতি হয়নি ফলে সালমানের মৃত্যু নিয়ে রহস্য আর উদঘাটিত হয়নি। হজরত শাহজালাল (র.)-এর পুণ্যভূমি সিলেটের মাটিতে চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন প্রবাদপ্রতিম এই নায়ক।


আমরা সকলে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করি আমিন।
নবীনতর পূর্বতন