একজন জারজের অবস্থান থেকে

একজন জারজের অবস্থান থেকে

মা…
আমি তোমার সন্তান বলছি, সবাই যাকে জারজ বলে জানে।
আমার জন্মের উৎস আমি জানিনা। আমার বাবাকে আমি চিনিনা।
আমি এই পৃথিবীর মুখ দেখেছি তোমার মাধ্যমে। জন্ম নিয়েছিলাম তোমারই কোলে অন্য সব নিষ্পাপ শিশুদের মতো।
সবাই এখন আমার দিকে আড়চোখে তাকায়। বলে, আমি অপবিত্র, আমি অবৈধ। আমি নাকি পিতৃপরিচয়হীন। কিন্তু কেন? এসবের মানে কি মা?
বাবা না থাক, আমার তো একজন মা আছে। মায়ের পরিচয়ে আমি কি বাঁচতে পারবোনা?
তা নাহলে পৃথিবীতে আমি কেন এসেছি? আমি এখন কোন পরিচয়ে বাঁচবো?

মা…
সবাই আজ আমার থেকে আলাদা কেন? আমি আজ প্রশ্নবিদ্ধ কেন?
কি ভুল ছিল আমার? জন্ম নেয়াটাই কি আমার ভুল ছিল?
তবে জন্মের সময় কেন হত্যা করলেনা আমায়?

মা…
সকল মানুষের মাঝেই তো স্বপ্ন থাকে। আমার মাঝেও আছে। কিন্তু আমি আর একটি কদমও সামনে আগাতে পারছি না। এক পা এগোলেই হাজারো প্রশ্ন।
একে একে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে সব স্বপ্নগুলো। যেন অন্ধকার হয়ে আসছে আমার পুরো পৃথিবী। আমার স্বপ্ন কি কোনদিনই পূর্ণ হবেনা মা?

মা…
যেই দুয়ারে যাই, সেই দুয়ার থেকেই তাড়িয়ে দেয় দুরদুর করে। হাসি-ঠাট্টা করে আমায় নিয়ে।
আমার কোন বন্ধুও নেই। কেউ আসেনা আমার কাছে, কেউ খেলেনা আমার সাথে।
যদিও কোন অবুঝ শিশু আমার কাছে আসে, খুব খুশি হই আমি। কিন্তু পরক্ষনেই তার মা তাকে নিয়ে যায় তোমারই অবহেলিত এই সন্তানটির কাছ থেকে।

মা…
আমি আজ খুব অবহেলিত। তোমাদের সামান্য সময়ের সুখ আজ আমার জন্য সারা জীবনের বোঝা, কষ্ট, আমার দিকে ইঙিত করা লোকসমাজের সহস্র আঙুল।
তোমাদের সুখের সময় একটিবারও আমার কথা ভাবলে না। ভাবলেনা আমার বসবাসযোগ্য পৃথিবীর কথা।
আফসোস! আমার বৈধ পৃথিবীতে আজ আমি অবৈধ।
তোমাদের অপবিত্রতায় আমার পবিত্র জন্মও আজ অপবিত্র।
শেষ পর্যন্ত আমার ঠিকানা কি হবে মা? আমি কি তবে না ফেরার দেশে যাবো? নিজেই কি বেছে নেব আমার শেষ ঠিকানা?

মা... ও মা...
হাজারো সুখী মানুষে থেকে আমি অনেক দূরের কেউ একজন। অগণিত মানুষের ভিড়ে আজ আমি একা।
এক অভিশপ্ত জীবন আমার, জন্ম থেকেই যেখানে আমায় ঘিরে সহস্র প্রশ্ন।
এসবের কি উত্তর দিব মা ???
নবীনতর পূর্বতন