ছবিঃ গুগল থেকে সংগ্রহিত |
প্রাথমিক জীবন ও শিক্ষা
ড. ফখরুদ্দীন আহমেদ ১৯৪০ সালের ১লা মে বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহন করেন । তার পিতার নাম ড. মহিউদ্দিন আহমেদ। ফখরুদ্দীন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতি বিষয়ে ১৯৬০ এবং ১৯৬১ সালে যথাক্রমে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর উভয়টিতেই প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মাসাচুয়েটসের উইলিয়ামস কলেজ থেকে উন্নয়ন অর্থনীতিতে মাস্টার্স এবং প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে ডক্টরেট সম্পন্ন করেন।[১]
কর্মজীবন
শিক্ষাজীবন সম্পন্নের পর তিনি কিছুকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। এরপর তিনি তৎকালীন পাকিস্তানের কর্মকমিশনে যোগ দেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর তিনি ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ কর্মকমিশনে চাকরী করেন। সে বছরই তিনি বিশ্বব্যাংকেযোগদান করেন এবং সময়ের ব্যাবধানে বিভিন্ন পদ পার করে ব্যাংকের উপরাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত হন। ২০০১ সালের ১৯শে নভেম্বর তিনি বিশ্বব্যাংকের তার পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের (বাংলাদেশ ব্যাংক) গভর্নর হিসেবে যোগদান করেন। ৩০শে এপ্রিল ২০০৫ সালে গভর্নর হিসেবে তার মেয়াদ অতিক্রমের পর তিনি পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পি.কে.এস.এফ) কর্মরত ছিলেন।[২]
রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বারা সৃষ্ট বিশৃঙ্খল অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের ১২ই জানুয়ারি তত্ִকালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করেন। একই সাথে সেনা সমর্থিত একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠিত হয় যার প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে ফখরুদ্দীন আহমেদকে নিয়োগ করা হয়। [৩] ফখরুদ্দিন আহমেদ ক্ষমতা গ্রহনের মধ্য দিয়ে ইতোপূর্বে রাষ্ট্রপতিকে প্রধান উপদেষ্টা করে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হয়। তিনি ২ বছর কেয়ার টেকার ছিলেন, ফখরুদ্দিন আহমেদ দায়িত্ব গ্রহনের পর তত্ִকালীন জাতীয় জীবনে রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ন অবদান রাখার জন্য বেশ প্রশংসিত হন। সে সময় বিশ্বের সর্বাধিক দূর্নীতিগ্রস্ত দেশ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশে ফখরুদ্দীন আহমেদ দূর্নীতিবিরোধী নানান কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সে সময় দেশের প্রায় ১৬০ জন রাজ্নীতিক, সরকারী কর্মকর্তা, নিরাপত্তা কর্মকর্তার নামে অর্থ আত্মসাত্ִ ও অন্যান্য দূর্নীতিরঅভিযোগ এনে মামলা করা হয়।[৪] এসময় দেশের ভূতপূর্ব দুই প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০০৯ সালের ৬ই জানুয়ারী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং এতে আওয়ামী লীগ দুই তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে ফখরুদ্দিন আহমেদ গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিলুপ্ত হয়। এরপর থেকে আহমেদ জনসম্মুখের আড়ালে রয়েছেন।
তার শাসন আমলের কিছু ঘটনা
- সাধারন মানুষ নির্ভয়ে চলাচল করতে পারতো,
- যেকোন পুলিশি সেবা নিতে ঘুষ লাগতো না,
- কোন সরকারি অফিসে কাজের জন্য ১ টাকাও ঘুষ দিতে হয় নি,
- মেয়েরা নিরাপদে চলাচল করতে পারতো, এমনকি রাত ১০ টার পরেও যদি কোন মেয়ে রাস্তা দিয়ে একা চলাচল করতো কোন বখাটের সাহস ছিলো না যে ইভটিজিং করবে। দিনে ইভটিজিং তো চিন্তার বাইরে ছিলো,
- বাংলাদেশের ইতিহাসে ধর্ষন সর্বনিম্ন পর্যায়ে ছিলো, ধর্ষন ছিলো না বল্লেই চলে,
- চাকরি নিতে কোন ঘুষ লাগতো না,
- কোন মারামারি হানাহানি, গাড়ি ভাংচুর, রাস্তা অবরোধ হতো না,
- ধর্মীয় সংখ্যালঘু বলতে কোন কথা ছিলো না, সবাই সমান অধিকার ভোগ করতো,
- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া হতো। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন মারামারি ছিলো না। কোন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতো না, কোন লেখাপড়ার পরিবেশ নষ্টকারী ছাত্র নেতাও ছিল না,
- রাস্তাঘাট, বাজার, গাড়িতে এক কথায় কোথাও চাঁদাবাজি ছিলো না। কোন গাড়ির মালিক / ড্রাইভার বলতে পারবে না যে, গাড়ি চালাতে গিয়ে রাস্তায় ১ টাকাও চাঁদা দিতে হয়েছে,
- অমুক ভাই, তমুক ভাই , ছাও নেতা, পাতি নেতা, টেন্ডার নিয়ে মারামারি ছিলো না, এই লোকটার আমলেই সকল দুইনাম্বার ব্যবাসা বন্ধ হয়ে গেছিলো।
- সরকারি সেবা বলতে যা বোঝায় তা মানুষ কোন ঘুষ তদবির ছাড়াই পেত,
- সব আকাম - কুকাম, মদ - জুয়া নারীবাজি বন্ধ হয়ে গেছিলো,
- পাসপোর্ট নিতে কোন ঘুষ লাগতো না, ভূমি অফিসে কোন ঘুষ লাগতো না, এয়ার পোর্টে কাউকে হয়রানির শিকার হতে হতো না,
- রাস্তার ট্রাফিক পুলিশ একটা টাকা চাওয়ার সাহস দেখাই নি,
- মানুষ নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারতো, ঘুম হয়ে যাওয়ার ভয় থাকতো না।
সূত্রঃ