পবিত্র হজ্জ্বের গুরুত্ব ও ফজিলত

পূর্ব কথাঃ পবিত্র ইসলাম যে সকল স্থম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত, তার মধ্যে পবিত্র হজ্জে বায়তুল্লাহ অন্যতম একটি স্থম্ভ । যার মধ্যে ইসলামের অন্য চারটি রুকন বা স্থম্ভ নিহিত রয়েছে ।এর অন্তর্নিহিত আবেদন ইসলামের অনবদ্য সুন্দর একটি অংগন কে ফুটিয়ে তুলে । আল্লাহর বাস্থব বা চাক্ষুস নিদর্শনাবলি কে প্রত্যক্ষ করার অতুল বিধিবদ্ধ কিছু কার্যাবলী পালন করার নাম হজ্জ্ব । নিম্নে আমরা হজ্জ্বের বিস্থারিত আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি ।

হজ্জ্বের পরিচিতিঃ الحج শব্দটি আরবী নাম বা ক্রিয়ামূল দুটোই ধরা যায় । এর অর্থ- ইচ্ছা করা, সংকল্প করা,সাক্ষাৎ করা বা মহৎ কোন জিনিসের প্রতি ইচ্ছা করা । হুজ্জাতুল ইসলাম আল্লামা ইমাম গাজ্জালি আলাইহির রাহমাত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন কিতাবে হজ্জের পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রদান করতে যেয়ে বলেন -الحج هوالقصد الي زيارة البيت الحرام علي وجه التعظيم بافعال مخصوصة في زمان مخصوص অর্থাৎ - আল্লাহর মহিমান্বিত ঘরকে সম্মানের লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট সময়ে সুনির্দিষ্ট কিছু কার্যসম্পন্ন করার ইচ্ছা পোষণ কে হজ্জ বলা হয় । আল্লামা বদরুদ্দীন আইনি (রাঃ)এর মতে - الحج هو قصد البيت علي وجه التعظيم অর্থাৎ - বাইতুল্লাহ শরীফের সম্মানের অন্বেষায় ইচ্ছা পোষণ করাকে হজ্জ বলা হয় ।

হজ্জের প্রকার ভেদঃ ইসলামী শরীয়তে হজ্জ তিন প্রকার । ১। হজ্জ্বে ইফরাদ ২। হজ্জ্বে তামাত্তু ৩। হজ্জ্বে কেরান ।
হজ্জে ইফরাদ ঃ افراد শব্দটি বাবে افعال এর মাসদার হিসেবে এর অর্থ হল একাকী হওয়া,শরীক না হওয়া । শরীয়তে হজ্জে ইফরাদ হল হজ্জ্বের মাসে মীকাত (এহরামের স্থান) হতে শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বাঁধা ।
হজ্জ্বে তামাত্তুঃ تمتع শব্দটি বাবে تفعل এর শব্দমূল হিসেবে অর্থ হল কোন কিছু থেকে ফায়েদা উপভোগ করা । ইসলামী শরীয়তে হজ্জ্বে তামাত্তু হল মীকাত থেকে শুধু হজ্জের জন্য ইহরাম বেঁধে ওমরা পালন করার পর হালাল হয়ে যাওয়া । আবার يوم ترويه তে ইহরাম বেঁধে হজ্জ্ব পালন করা ।এখানে যেহেতু হজ্জ্ব ও ওমরার মধ্যে হালাল হয়ে ফায়দা উপভোগ করা যায় সেহেতু এ প্রকারের হজ্জকে হজ্জ্বে তামাত্তু বলা হয় ।
হজ্জ্বে কেরানঃ  قران শব্দটি قرن থেকে বাবে مفاعله এর মাসদার বা শব্দমূল । অর্থ – দুটি বস্তু একত্রে মিলে থাকা। এজন্য ই সংগী কে قرين বলা হয়ে থাকে । ইসলামী শরীয়তে মীকাত হতে একই সাথে নিয়ত করে একই ইহরামে হজ্জ্ব ও ওমরা পালন করাকে হজ্জে কেরান বলা হয় ।
কোন প্রকারের হজ্জ উত্তমঃ  তিনটি প্রকারের হজ্জের মধ্যে কোন প্রকারের হজ্জ্ব উত্তম এ ব্যপারে ইমামগণের মধ্যে মতবিরোধ পরিলক্ষিত হয় ।
ইমাম আহমদ (রাঃ)এর মতে হজ্জে ইফরাদ উত্তম। দলীল হিসেবে তিনি আল্লাহর রাসূলের (দরূদ) হাদীছ উল্লেখ করে বলেন -تمتع رسول الله صلي الله عليه وسلم আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামাত্তু হজ্জ করেছিলেন ।বিধায় হজ্জে তামাত্তু উত্তম ।
ইমাম মালেক ও ইমাম শাফেয়ী আলাইহিমার রাহমাত হযরত আয়েশা ছিদ্দীকা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণিত হাদীছ উল্লেখ করে বলেন- انه عليه وسلم اهل للحج مفردا নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেবল মাত্র হজ্জের জন্য তাহলীল করেছিলেন ।বিধায় হজ্জে ইফরাদ ই উত্তম ।
ইমাম আযম আবু হানিফা (রাঃ)এর অভিমতঃ ইমাম আযম বলেন হজ্জ্বে কেরান ই উত্তম । আল্লাহ পাক কালামে পাকে এরশাদ ফরমান- اتموا الحج و العمرة لله আল্লাহর জন্য হজ্জ ও উমরা পূর্ণ কর ।উপরন্ত হযরত যাবের (রাঃ)বর্ণিত হাদীছে আছে- ان النبي صلي الله عليه وسلم قرن الحج و العمرة নিশ্চয় আল্লাহর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়য়াসাল্লাম একই সাথে হজ্জ ও ওমরা মিলিয়ে আদায় করেছিলেন।অতএব হজ্জে কেরান উত্তম । যে ইবাদাতে কষ্ট বেশী সেখানে সওয়াব ও বেশী হওয়ার কথা বিবেক গ্রাহ্য । আর কেরান হজ্জে একই ইহরামে হজ্জ ও ওমরা দূটিই আদায় করতে হয় বলে কেরান হজ্জে কষ্ট ও বেশী । তাই সাওয়াব ও বেশী হওয়াই যুক্তিযুক্ত ।এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হচ্ছে ইসলামের মধ্যে মাযহাব গুলো যদি না থাকতো ,ইমামগণ যদি আল্লাহর রাসূলের হাদীছ গুলো আমাদের জন্য সন্নিবেশিত করে না যেতেন;তাহলে সহিহ হাদীছের নামে একটি কে আমল করে নবীজির অপরাপর আমল গুলো পালনের বাহিরে থেকে যেত ।মাযহাব গুলোর কারণেই হজ্জ্বের ব্যপারে ও নবীজির কৃত সকল আমল পালন করা হচ্ছে ।
হজ্জের গুরুত্বঃ  মহান ও মহিয়ান আল্লাহ তা’লা ফরমান-ولله علي الناس حج البيت من استطاع اليه سبيلا অর্থাৎ - হজ্জের ব্যপারে সামর্থ্যবান ব্যক্তির জন্য আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হজ্জ সম্পন্ন করা অপরিহার্য । আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঘোষণা করেন- হজ্জের পাথেয় ও সামর্থ্য থাকার পর যে ব্যক্তি হজ্জ আদায় করল না ;সে ব্যক্তি ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টান হয়ে মৃত্যু বরন করুক আমি নবীর উপর তার কোন দায়িত্ব নেই । চিন্তার বিষয় হচ্ছে ইসলামের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার উপর থেকে নিজের জিম্মাদারীত্বকে নাকচ করে দিয়েছেন তার কি পরিনাম হতে পারে ? অর্থাৎ ঐ ব্যক্তি নির্ঘাত ক্ষতিগ্রস্থ এতে কোন সন্দেহ নেই ।
হজ্জ্বের ফজিলতঃহজ্জ্বের ফজিলত সম্পর্কে ইসলামে ব্যাপক আলোচনা পরিদৃষ্ট হয় ।নিম্নে তার কিয়দাংশ আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি - ع ন جابر قال ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قال هذا البيت دعامة الاسلام فمن خرج يوم هذا البيت من حاج او معتمر كان مضمونا علي الله ان قبض ان يدخله الجنة وان رده رده باجر و غنيمة অর্থাৎ হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নিশ্চয় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান- এ ঘর (বাইতুল্লাহ) হচ্ছে ইসলামের বুনিয়াদ বা ভিত্তি ।যে হজ্জের দিনে হাজী বা উমরাকারী হিসেবে উহার দিকে বের হল সে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মাদারিত্বে রয়ে গেল । যদি মৃত্যু বরণ করে তাহলে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন । আর যদি ফিরে আসে তাহলে পুরস্কৃত হয়ে বা গনিমত সহকারে ফিরে আসল ।
عن ابي هريرة رضي الله تعالي عنه قال ان النبي صلي الله عليه وسلم قال العمرةالي العمرةكفارة لما بينهما والحج المبرور ليس له جزاء الا الجنه অর্থাৎ- হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন নিশ্চয় রাসূলে পাক সাহেবে লাওলাক এরশাদ করেন- এক ওমরা থেকে আরেক ওমরা হচ্ছে তার মধ্যকার সবকিছুর কাফফারা স্বরূপ।আর হজ্জে মাবরুর (মকবুল হজ্জ) এর প্রতিদান কেবল জান্নাত ই হয়ে থাকে । (সহিহ বুখারী হাদীছ নং ১৭৭৩)
মুসনাদে ইমাম আহমদে আব্দুল্লাহ বিন বুরাইদা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন , আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফরমান -النفقة في الحج كا النفقةفي سبيل الله سبع ماءةضعف অর্থাৎ - হজ্জ্বের খরচাদি যেন আল্লাহর পথে জিহাদে খরচের ন্যায় সাতশ’গুন বৃদ্ধি পেয়ে থাকে ।(আহমদ হাদীছ নং ২২৪৯১)
عن ابي هريرة رضي الله تعالي عنه قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول من حج لله ولم يرفث ولم يجادلرجع كيوم ولدته امه অর্থাৎ হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’লা আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আমি শুনেছি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন যে ব্যক্তি হজ্জ্ব করল ঝগড়াঝাটি না করে এবং অশ্লিলতা না করে, সে ঐ দিনের মত নিস্পাপ হয়ে গেল যেন তার মা তাকে প্রসব করেছেন । (বুখারী শরীফ হাদীছ নং-১৫২১)
আল্লাহ পাক আমাদের সকল সামর্থ্যবান কে পবিত্র হজ্জ ও জিয়ারতে মদীনার সৌভাগ্য নছি করুন ।
নবীনতর পূর্বতন