আমি জানি প্রেম করা হারাম..কিন্তু! আমি তো ওকে ভালোবাসি।

 


“কেউ যদি এখন হাতভর্তি গোলাপ এনে বলে ভালবাসি, ভালবাসি খুব!

তুমি চাইলে এনে দিতে পারি আকাশের ওই মেঘমালা, রোদ্দুর পাড়ি দিতে পারি প্রেমের সমুদ্দুর।

তুমি চাইলেই নদী হয়ে বয়ে যাব পাড়ি দেব দূর্গম সব পর্বতমালা, তুমি কি আমার হবে সারাবেলা?”



কৈশোরে যদি এমন আকুতি আর আবেগমাখা ভালোবাসা নিয়ে কিশোরীর দুয়ারে কোনো কিশোরের আগমন ঘটে সেই মুহুর্তে তাকে ফিরিয়ে দেয়া অনেক কিশোরীর পক্ষেই আর সম্ভব হয় না। কৈশোরের কৌতুহল, নতুন হরমোনের স্রোতধারা, আর বাঁধ ভাঙ্গা আবেগের বাতাস তখন চারিদিক থেকে ঘিরে ধরে। তখনই কিশোর কিশোরী এক অন্ধকার জগতে পা বাড়ায়। এর শেষ পরিণতি কি হবে তা তাদের জানা নাই..! ব্যাপারটা শুধু যারা দ্বীন বুঝে না এমন পরিবারের সন্তানদের ক্ষেত্রে ঘটে না। এটা দ্বীন বুঝে এমন ছেলে মেয়েদের ক্ষেত্রেও ঘটে। অনেকে জানে প্রেম করা হারাম। তারা যা করছে সেটা ভুল, সেটা পাপ। কিন্তু নিজের মনের কাছে, নিজের আবেগের কাছে হার মানে…!


শারিরিক চাহিদা মানবজীবনে খাবারের মতোই নিত্যপ্রয়োজনীয় একটা বিষয়। যদি বৈধভাবে ব্যবস্থা না করা হয় তখন অবৈধ পথে এসব করে বেড়াবে। শুধু নীতি কথা বলে কিশোর কিশোরীর প্রেম বন্ধ করা যাবে এই উসুলে আমি বিশ্বাসী না। কারণ ইসলাম বাস্তব সমস্যার সমাধান না দিয়ে শুধু নীতি বাক্য শুনিয়ে কোনো সমাধান দেয় নি। আপনি যদি লক্ষ করেন ইসলামের বিয়ের গুরুত্ব অনেক। বিশেষ করে অভিভাবকদের এ ব্যাপারে খুবই গুরুত্বের সাথে নির্দেশ দেয়া হয়েছে

وَأَنْكِحُوا الْأَيَامَى مِنْكُمْ

“তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিয়ে সম্পাদন করে দাও।”

বয়ঃসন্ধিকালে কিশোর কিশোরীদের মনে নতুন আবেগ জাগ্রত হবে। একজন সঙ্গীর জন্য মন আনচান করবে এটা স্বাভাবিক । আদম আলাইহিস সালাম জান্নাতের সকল নেয়ামত পেয়েও ‘কিছু একটা নাই’ ফিল করছিলেন, তার নিজেকে অপূর্ণ মনে হচ্ছিলো। তার বাম পাঁজরের হাড় দিয়ে তার জন্য সঙ্গী তৈরি করে দেওয়া হলো।


একটু ভাবুন, জান্নাতের সব নেয়ামত থাকার পরও যদি আদম আলাইহিস সালামের সঙ্গীর প্রয়োজন হয় তবে অভাবের এই পৃথিবীতে আমাদের এর প্রয়োজন অনেক বেশি। সঙ্গীর সাথে সম্পর্ক শুধু শারিরিক ব্যাপারটা মোটেও এমন না। মানষিক প্রশান্তি দূর করার জন্যও সঙ্গী দরকার। আল্লাহ মানুষের জন্য সঙ্গী বানিয়েছেন, যাতে তারা পেতে পারে প্রশান্তি, একে অপর থেকে পেতে পারে ভালোবাসা আর দয়া-মায়া।

আরেক নিদর্শন এই যে

أَنْ خَلَقَ لَكُمْ مِنْ أَنْفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُمْ مَوَدَّةً وَرَحْمَةً

“তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন।” (সুরা রুম : ২১)


কৈশোর কালেই এ বিষয়গুলো খুব বেশি প্রয়োজন। কারণ যৌবনেই সবচে’ বেশি শারিরিক চাহিদা থাকে, অনেক বেশি ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়, ভালোবাসা পেতে ইচ্ছা হয়।

এই যৌবন কতক্ষণ?? ১৫ বছর থেকে ৩০ বছর অর্থাৎ মাত্র ১৫ বছর থাকে যৌবনকাল। এই মুহুর্তে যদি আপনি নীতি কথা বলে তাদের পবিত্র থাকতে বলেন এটা কারো কারো পক্ষে মানা সম্ভব হলেও সবার জন্য মানা সম্ভব হবে না। মানুষ তখন লুকিয়ে লুকিয়েই অপরাধ করে যাবে। আমাদের সমাজ এখন ছেলে-মেয়ে ফ্রি মিক্সিং-এর সমাজ। স্কুল কলেজ কোচিং সেন্টার গুলোতে ছেলে-মেয়ে এক সাথেই পড়ে। এমনিতেই এই বয়সে বিপরিত লিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ তৈরি হয় তারপর যদি দৈনিক ১০/১২ ঘন্টা ছেলে মেয়েদের এক রুমে রেখে আপনি তাদের প্রেম করতে নিষেধ করেন আপনার এই নিষেধ মানার জন্য কেউ থাকবে না। প্রেম হলো এক প্রকার রোগ। অন্তরের রোগ। যখন মানুষ প্রেমে পড়ে তখন তার হৃদয় অন্ধ আর বধির হয়ে যায়। প্রেমের আরেকটা দিক হলো এটা মাদকের মতো কাজ করে। মানুষের মন মগজ নিয়ন্ত্রনে নিয়ে নেয়। তখন সে যদি জানেও সে ভুল করছে, তারপরও তার সেখান থেকে ফিরে আসার সুযোগ থাকেনা। এ কারণেই অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করে ফেলে।

প্রেমের একমাত্র ঔষধ হলো বিয়ে। বিয়ে ছাড়া প্রেমাসক্ত থেকে মানুষকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই কিশোর কিশোরীর যখন প্রেমে পড়ার সম্ভাবনা থাকে তখন বাবা মায়ের উচিত হল তাদের বিয়ে দেওয়া। এটা অভিভাবকের দায়িত্ব। যদি তারা বিয়ে দিতে না চায়—তারপরও গুনাহ করার সুযোগ নেই। সন্তানের উচিত নিজ দায়িত্বে বিয়ে করে নেয়া। অন্যথায় নিজের গুনাহ তো হবেই পাশাপাশি বাবা-মাকেও গুনাহগার বানানো হবে।


ভাই আমার, আপনি জানেন প্রেম করা হারাম, তারপর আপনি কেন প্রেম করছেন?

আমি জানি আপনি তাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি কি চান আপনার এই ভালোবাসার মানুষটা জাহান্নামের আগুনে জ্বলুক? আপনি কি চান, আপনার এই সস্তা আবেগের কারণে আপনার ভালবাসার মানুষটার বাবা মা যিনাকারী হিসেবে সাব্যস্ত হোক?

আপনি কি চান তাকে ভালোবাসার ফলে আপনাকে ভালোবাসে আপনার বাবা-মা ব্যভিচারকারী হিসেবে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হোক?

আপনি কি চান.. দুনিয়ায় এই দুই চার পাঁচ বছরের সুখ শান্তির জন্য আপনার চিরস্থায়ী জান্নাতের সুখ নষ্ট হোক??


ভাই আমার, আপনি কি চান না, আপনার এই ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতে যেতে? আপনি কি চান না আপনার এই ভালোবাসার মানুষটিই জান্নাতে সব হুরদের থেকে সুন্দরী ও আকর্ষণীয় হোক? আপনি কি চান না, আপনার এই ভালোবাসার মানুষটিকে জান্নাতে প্রথমবার দেখতে? যেখানে প্রথমবার দেখার পর পরস্পর পরস্পরের দিকে তাকিয়ে 40 বছর কেটে যাবে!

তাহলে আপনি কেন হারাম জেনেও এই হারাম সম্পর্ককে টিকিয়ে রেখেছেন?


আপনার সামনে দুইটা অপশন আছে—


১) আপনি তার পরিবারের সাথে কথা বলুন। তাদেরকে রাজি করুন। আপনার বাবা মায়ের সাথে কথা বলুন। এরপর পারিবারিকভাবে বিয়ে করুন।

২) তাহলে ভালোবাসাকে চিরস্থায়ীভাবে বিদায় দিন। কখনোই এই কথা বলবেন না যে আমি জানি প্রেম করা হারাম কিন্তু… আমি তাকে ভালোবাসি।

আপনার এই ভালোবাসা মিথ্যা। বিয়ে ছাড়া আপনার এই ভালোবাসা ধোঁকা, প্রতারণা। আপনি ভালোবাসার জন্য যোগ্য কোন ব্যক্তি নন। তাই মিথ্যা বলে নিজেকে এবং অন্যকে ধোঁকা দিবেন না। একটা কথা মনে রাখুন, আপনার পাপের কারণে শুধু আপনি একা নন, আপনার বাবা-মা, আপনার প্রেমিকা, তার বাবা-মা, সবাই গুনাগার হবে। আপনি দুইটা পরিবারকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করছেন..! আপনি কিভাবে ভালবাসার দাবি করেন?

চোখ বন্ধ করে একটু ভাবুন তো, আপনার সামনেই আপনার বাবা-মা আগুনে পুড়ে জ্বলছে? আপনার গুনাহর কারণে আপনি যাকে ভালবাসার দাবি করেন সেও আগুনে পুড়ছে, তার বাবা-মাও আগুনে পুড়ছে? আপনি কি তা সহ্য করতে পারবেন? এখন সিদ্ধান্ত নিন, এ হারাম সম্পর্কে কি হারাম রাখবেন? নাকি বিয়ে করে বৈধ করবেন?

(ভালোবাসার বন্ধন বই থেকে)


কালেক্টেড

নবীনতর পূর্বতন