জিনের নজর : যে বিপদ নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়

যে বিপদ নিয়ে খুব কম আলোচনা হয়

 

[ক]

জিনের বদনজর কথাটা আমরা খুবই কম শুনেছি। আমাদের দেশে বিভিন্ন এলাকায় এর প্রচলিত নাম হচ্ছে, বাতাস লাগা, আলগা সমস্যা, উপরি সমস্যা ইত্যাদি। এবার হয়তো একটু পরিচিত মনে হবে।

এই বিষয়ে আরও অনেক আগেই লেখা উচিত ছিল, কিন্তু বিভিন্ন কারণে হয়ে ওঠেনি। আজ ইনশাআল্লাহ আমরা আলোচনা শুরু করতে পারি।

আমভাবে বদনজরের ব্যাপারে এখন আমরা অনেকেই জানি, আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: তোমরা বদনজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাও, কেননা বদনজর সত্য!। (ইবনে মাযাহ ৩৫০৮) এব্যাপারে বিখ্যাত প্রায় সব হাদিসগ্রন্থেই কিছু কিছু হাদিস এসেছে। এক হাদিসে আছে – রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আল্লাহর ফায়সালা ও তাক্বদিরের পর আমার উম্মতের বড় অংশের মৃত্যু হবে বদনজরের কারণে!”। (মুসনাদে আবি দাউদ ১৮৫৮, সনদ হাসান)

তার মানে বিষয়টায় আসলেই আমাদের গুরুত্ব দেয়া উচিত।


[খ]

(এই পয়েন্ট আলেমদের জন্য) মানুষের নজর বোঝাতে আরবিতে ‘আইন’ বা ‘নাযর’ ব্যবহার হলেও জ্বিনের নজর বোঝাতে আইনুল জিন না বলে সাধারণত ‘আনফুসিল জিন’ ব্যবহার হয়। দ্বিতীয় হাদিসে কিন্তু আনফুস শব্দই এসেছে! পরের হাদিসের রাবি বলেছে আনফুস অর্থ হবে আইন! রাসুল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে একটা দীর্ঘ দোয়া পাওয়া যায়, তবে আমার জানা নেই এর সনদের মান কেমন –

اللهم يا ذا السلطان العظيم، والمن القديم، والوجه الكريم، يا ذا الكلمات التامات، والدعوات المستجابات، عاف الحسن والحسين من أنفس الجن وأعين الانس

শেষ বাক্যের অর্থ এমন – (হে আল্লাহ) হাসান এবং হুসাইনকে সুস্থ করো জিনের নজর এবং মানুষের নজর থেকে।

এখানেও আনফুস শব্দ ব্যবহার হয়েছে।


[গ]

জিনের নজর কিভাবে লাগে?


অনেক রাতে বা ভর দুপুরে জনমানবহীন রাস্তা কিংবা পুকুর পাড়ে আপনি হাঁটছেন, সেখানে কিছু বদজ্বিন দাঁড়িয়ে ছিল, আপনিতো দেখেননি। আপনি তাদের পাশে বা মাঝে দিয়ে গেলেন। হিফাজতের আমল করা হয়নি সেদিন, তখন লাগতে পারে নজর। বাচ্চারা সন্ধ্যার সময় বাইরে দৌড়াদৌড়ি করছে, জানালার ধারে বসে আছে, (রাসূল সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন এসময় শয়তানরা ছড়িয়ে পড়ে।) তখন লাগতে পারে নজর।

.

জিনের নজরের প্রভাবে কি কি হতে পারে? কিভাবে বুঝব জিনের নজর লেগেছে?

সংক্ষেপে বললে মানুষের বদনজরের জন্য যা যা হয়, তার সবকিছু। এর সাথে প্রচণ্ড ওয়াসওয়াসার সমস্যা এবং জ্বিনের আসরের বেশ কিছু উপসর্গ দেখা যেতে পারে। চিকিৎসা না করা হলে ভবিষ্যতে তার ওপর সহজেই জিন আসর করতে পারে।

জিনের আসর এবং বদনজরের সাধারণ লক্ষণ কমেন্টের লিংকে পাওয়া যাবে।


[ঘ]

কিছু লক্ষণ আছে জিনের বদনজর আক্রান্তদের মাঝে খুব বেশি দেখা যায় –

১. কোনো কারণ ছাড়াই ভয় ভয় লাগে।

২. মনে হয় আশেপাশে কেউ আছে। কখনো মনে হয় একটা ছায়া চলে গেল।

৩. রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না। বারবার ঘুম ভেঙে যায়। আজেবাজে স্বপ্ন দেখে চমকে ওঠে।

৪. ওসিডি/শুচিবাই/ওয়াসওয়াসা বৃদ্ধি পায়। অনেকের এটা খুব বাজে অবস্থায় চলে যায়।

৫. কিছু ক্ষেত্রে প্যানিক এটাক অথবা বাইপোলার ডিজঅর্ডার দেখা যায়।

৬. জিনের কিছু লক্ষণ স্বল্প মাত্রায় এবং বদনজর অনেক লক্ষণ প্রকট আকারে দেখা যেতে পারে।

৭. কমন স্বপ্ন: লাল চোখ, কেউ তাকিয়ে আছে, মলমুত্র, মানুষ বা প্রাণীর ছায়া ইত্যাদি।

.

একটা বিষয় লক্ষ্য করবেন, বেদ্বীন ছেলেদের মাঝে যারা প্যারানরমাল বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যান্টাসিতে থাকে, কোনো গাইড ছাড়া, হিফাজতের আমল না করে জাদু, জিন-ভুত নিয়ে অনলাইন – অফলাইনে ঘাটাঘাটি করে, তাদের অনেকেই ওপরে বলা সমস্যাগুলোয় আক্রান্ত হয়। এর মূল কারণ হচ্ছে জিনের নজর।


[ঙ]

আক্রান্ত হলে কি করা উচিত?


যত দ্রুত সম্ভব চিকিৎসা করা উচিত। যদি এমন হয়, আগে সমস্যাগুলো ছিল, ইদানীং কমে গেছে, তবুও রুকইয়াহ করা উচিত।

চিকিৎসা-১: জিনের নজর থেকে সুস্থতার নিয়তে রুকইয়ার কমন আয়াতগুলো তিলাওয়াত করা, তিলাওয়াতের পর পানিতে ফুঁক দিয়ে গোসল করা। এভাবে কয়েকদিন করা।

চিকিৎসা-২: বদনজরের রুকইয়ার প্রচলিত নিয়ম ফলো করা, সাথে অতিরিক্ত ৮সুরার রুকইয়াহ শোনা।

অর্থাৎ * প্রতিদিন Evil Eye (বদনজর) এবং সুরা ইয়াসিন, সফফাত, দুখান, জ্বিন… (৮সুরা) রুকইয়ার অডিও শোনা। * প্রতিদিন পানিতে হাত রেখে দরুদ, ফাতিহা, আয়াতুল কুরসি, ৪কুল, দরুদ – সব ৩ বা ৭বার পড়ার পর গোসল করা, অথবা এসব পড়ে পানিতে ফুঁ দিয়ে গোসল করা।

এই সমস্যা থাকলে রুকইয়াহ চলাকালীন প্রচণ্ড ঘুম আসতে পারে, ক্লান্ত লাগতে পারে, হার্টবিট বেড়ে যেতে পারে, আর কারও কারও সাময়িক মাথাব্যথা হতে পারে। এসবে একদমই ভয়ের কিছু নেই। সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ চলে যাওয়া পর্যন্ত নিয়মিত রুকইয়াহ করতে থাকবেন।

.

প্রয়োজনীয় অডিও এবং পিডিএফ আমাদের ওয়েবসাইট ruqyahbd,org তে পাওয়া যাবে।


[চ]

আবার যেন আক্রান্ত না হই, এজন্য কি করা উচিত? এই সমস্যা থেকে বেচে থাকতে কি করব?


১. প্রতিদিনের হিফাজতের যিকরগুলো, বিশেষত সকাল সন্ধ্যা এবং ঘুমের আগের মাসনুন আমল করা উচিত। (লিংক কমেন্টে থাকবে)

২. নতুন কোথাও গেলে বা নির্জন পথে হেঁটে যাওয়ার সময় এই দোয়া পড়ে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া উচিত:

أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

আ’উযুবি কালিমা-তিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি, মিং-শাররি মা-খলাক্ব। (মুসলিম ৪৮৮৮)

৩. ঠিক সন্ধ্যাবেলায় বাচ্চাদের বাইরে যেতে না দেয়া। বিসমিল্লাহ বলে জানালা-দরজা বন্ধ করা।

….


আল্লাহ যেন আমাদেরকে এধরণের সমস্যা থেকে হিফাজত করেন। আমিন।

নবীনতর পূর্বতন