এদেশের চলমান প্রেক্ষাপট ও আগামীর প্রজন্মে আমাদের প্রাণহীন বেঁচে থাকা
তবে ভাল-মন্দ কিছু কিছু বিষয় কেন জানি মগজে ঠাঁই করে নেয়।
এদেশের চিত্রপটে চোখ রাখলে নিজ অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে।
ছয়টা ঋতুর এমন একটা ভূখণ্ড, মেধাবী জনশক্তি পেয়েও আমাদের প্রতিনিধিরা দেশটাকে সুন্দরভাবে না সাজিয়ে স্বার্থপরের মতো তার নিজের আখের গুছাতে ব্যস্ত।
কি নেই এখানে?
শান্তিপূর্ণ একটা রাষ্ট্র গড়তে যা কিছু দরকার তার প্রায় সবটাই আছে।
তবে হ্যাঁ, এখানে রাষ্ট্র আছে, শান্তি নেই।
শান্তি যদিও থাকে, তা ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত। নিজ যোগ্যতায় কিছুদিন ভাল থাকা যাকে বলে আরকি। সম্মিলিতভাবে ভোগ করার মত পর্যাপ্ত শান্তি এখানে নেই।
প্রতি ১০ কিলোমিটারের মাঝে অন্তত ১০ জন পাবেন, যারা গত দু-এক বছরে রাজনৈতিক কারণে খুন হয়েছে।
এমনটা তো হবার কথা ছিলনা। আমরা কেন খুন হবো? আমাদের ভালবাসায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কেন আমাদের ঠেলে পাঠাবেন মৃত্যুর দুয়ারে? এজন্যই কি তাদের নির্বাচিত করা হয়েছে?
যাক সেকথা অন্য প্রসঙ্গে যাই।
এদেশের মন্ত্রীপরিষদে জায়গা পাওয়া একজন রাজনীতিবিদ কোথা থেকে আসে?
একবার পিছনে চোখ রাখলেই সেটা বোঝা যাবে।
বাল্যকালে যারা ব্যাক-বেঞ্চে বসেছে, শিক্ষকের সাথে বেয়াদবি করেছে, স্কুলজীবনে স্কুল পালিয়েছে, রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে মেয়েদের দিকে নোংরা কথা ছুড়ে দিয়েছে, কমনরুমে বসে গাঁজা খেয়েছে, কলেজ জীবনে তার সহপাঠীকে কুপিয়েছে, বছরের পর বছর এভাবে করে করে এক সময়ে তারাই এসে জনগণকে প্রতিনিধিত্ব করছে।
এদের থেকে আমরা পাবোটা কি?
পড়াশুনা না করলে নৈতিকতা, সামাজিকতার শিক্ষা তারা কোথা থেকে পাবে?
আরও একটা মজার ব্যাপার হলো, যেই ক্লাসে সে ব্যাক-বেঞ্চার ছিলো, ঐ ক্লাসের ফার্স্ট-বেঞ্চার এসে তার গোলামী করে। অনেকে আবার সেই গোলামী করার সুযোগটাও পায়না।
মানলাম ভাল ছাত্রটা খারাপ ছাত্রের গোলামী করে। কিন্তু ঐ খারাপ ছাত্রের উদ্দেশ্যটাও যদি একটু ভাল হতো, তাহলেও তো ভাল ছাত্রটা দেশ গড়ায় এগিয়ে যেতো। অন্তত স্বার্থপরের মত সে তার শিক্ষাকে শুধুমাত্র নিজের কাজে ব্যয় করতো না।
একদিক থেকে ওই ভাল ছাত্রটাও দোষী।
উন্নত শিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও কেন সে জনগণের দায়িত্ব অসৎ লোকের হাতে তুলে দেবে, অথবা সব অন্যায় চেয়ে চেয়ে দেখবে। তারও তো নিজ দায়িত্ব আছে দেশকে সুপথে এগিয়ে নেয়ার।
তবে কেন সে এ পথে পা বাড়ায় না?
এই দোষটা কিন্তু গণ্যমান্য নেতাদের।
একটু ভেবে দেখুন,
কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে সে দেশের ভার নেবে?
কিভাবে সে দুপায়ে দাঁড়িয়ে নেতাদের উদ্দেশ্যে বলবে যে, আপনারা ভুল আর আমি শুদ্ধ।
পা দুটো কেটে মুখটা বন্ধ করতে দু মিনিট সময় লাগবে না নেতাদের।
সে মেধাবী না কি, সেটা ভেবেও দেখবে না।
স্বাধীন মত প্রকাশের ক্ষমতা এই ভূখণ্ডে নেই। আছে, তবে মত প্রকাশ আর শেষ নিশ্বাসের ব্যবধানটা কয়েক ঘণ্টার।
মেধাবীরা যদি দাড়াতেই না পারে, দেশের ভার তারা কীভাবে নেবে?
তার থেকে সব দেখে সহ্য করে স্বার্থপরের মতো একটা জীবন বেছে নেয়াই কি ভাল না?
মা-বাবা ও প্রিয়জনের মাঝে বেঁচে থাকতে কে না চায়...!!
এসব কারণে আমাদের মেধাবীরা রাজনীতি না করে নিজের কথা ভাবে। আর ঠিক একারণে সুখটা এখন ব্যক্তিগত সম্পত্তির মত হয়ে গেছে। অন্যের সুখে কেউ হাসে না, নিজের সুখের ভাগও কাউকে দেয় না।
শান্তির কথা বাদ দিয়ে এবার একটু মাটিতে মিশে যাই কিছুক্ষণের জন্য।
এদেশের মাটির ক্ষমতা একবার গভীরভাবে ভাবুন, নিশ্চিতভাবেই অবাক হবেন।
এখানে পরিত্যক্ত যায়গায়ও যদি একটা শিমের বিচি অবহেলায় পড়ে থাকে, তাহলে, সেটা একটা পরিবারের সারা বছরের শিমের চাহিদা মিটাতে পারবে। কতখানি উর্বর আমাদের মাটি।
আমার দেশের মাটির মত উর্বর মাটি অন্য কোথাও আছে কিনা, এবং তা পর্যাপ্ত কিনা, তা খুঁজে বের করতে নিশ্চই অনেক কষ্ট হবে।
তার পরেও এখানে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হেক্টর জমি অনাবাদী পড়ে থাকে।
আমার বিশ্বাস, অন্য কোন দেশের শাসকেরা এমন পতিত জমি পেলেও সেখানে বিকল্প চাষের ব্যবস্থা করে সোনা ফলাতো।
আফসোস, আমাদের প্রতিনিধিরা এ-সম্পর্কে উদাসীন।
তারা কৃষকদের সঠিক গাইডলাইন দেয় না। সাহায্যও করেনা। ফলে কৃষক অজ্ঞতাবশত রাসায়নিক সার ব্যবহার করে মাটির গুনাগুণ নষ্ট করে ফেলছে। একযুগ পরে এখানে কি জন্মাবে আর আমরা ও আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কি খাবে?
আমাদের কৃষি অফিসাররা তো লাট বাহাদুর, অফিসে গেলাম তো গেলাম, না গেলে নাই। কোন কৃষক অপরিচিত হলে তার সাথে উনাদের সঠিকভাবে কথা হয় কিনা কে জানে।
যাক সেকথা, দোষ আমাদেরই।
উপযুক্ত জ্ঞান থাক আর নাই থাক, আমরা টাকা খেয়ে তার মতো অধিকতর দক্ষ কাউকে নিয়োগ দিয়েছি। আর ফার্স্ট বেঞ্চের ছাত্রটাকে কড়া রোদে ধান কাটতে পাঠিয়েছি।
আরেকটা বিষয় লক্ষণীয়...
ফসলী মৌসুমে কৃষক তার ফসল সঠিক দামে বিক্রি না করতে পেরে এতটাই হতাশ হয় যে, সে পরের বছর কিছু চাষের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়। জমি পতিত থাকে।
অথচ ভরা মৌসুমেও আমরা সঠিক দামে বাজার থেকে পণ্য কিনতে পারি না।
তবে আড়তদারের বাঁকা-চন্দ্র হাসিটা সারাবছরই তার মুখে লটকে রাখে।
কিভাবে রাখে তা ভাল করেই জানেন।
আমাদের প্রতিনিধিরাও জানেন। তবে তাদের হস্তক্ষেপ স্বার্থপরতার মাঝে সীমাবদ্ধ।
যাহ, মাটির কথা বলতে বলতে একেবারে মাটির রচনা লিখে ফেলেছি।
এরকম হাজারো বিষয় আছে যা শুধু দেখে যাই আর অন্তরকে ভারী করে তুলি।
কোন জিনিসটা আমরা সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পেরেছি?
রাস্তাঘাট থেকে স্কুলভবন, এমনকি মসজিদ, মন্দিরের বরাদ্দকৃত অর্থেও নেতাদের হাতের ছাপ দেখা যায়।
খাক টাকা...!! তিনের এক অংশ খা।
তিনের দুই অংশ খেলে সে প্রকল্পের কাজ কতখানি ভাল হতে পারে, বলুন।
খেতে খেতে এমন অবস্থায় চলে গেছে যে, এখন রডের পরিবর্তে বাঁশ ব্যবহার করছে।
মানসিকতা কতখানি নিচে নেমে গেছে।
এদের সামান্য মানসিকতা থাকলেও অন্তত এটা ভাবতো যে, কয়েক বছর পরে মানুষের কি হবে।
যাক সেকথা... উনি নাহয় খেলেন।
প্রশাসন কি করলেন? উনাকে বদলী করে দিলেন।
মানে, এখন তাকে আবার নতুন করে খাবার সুযোগ করে দিলেন।
দোষগুলো কার?
কেন আমরা ভবিষ্যৎ দেশটার কথা ভাবতেছি না?
আমরা মরার পরে এখানে কি কেউ থাকবে না? যদি থাকে, তবে কেন আমরা এতখানি স্বার্থপর?
আমাদের এই দুরবস্থা থেকে আমরা কি কোনদিনই বের হতে পারবোনা?
ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আমরা কোন খুঁটির উপরে দাড় করিয়ে যাচ্ছি?
তারা এই সমাজে, এই দেশে কীভাবে বাঁচবে?
মাঝে মাঝে ভাবি, আমি যদি মানুষের ত্রাতা হতাম, দেশটাকে ঢেলে সাজাতাম।
প্রতিটা মানুষ সন্ধ্যায় মুখভরা হাসি নিয়ে ঘরে ফিরে যেতো আর আমার জায়গাটা হতো তাদের প্রার্থনায়। চিরকাল বেঁচে থাকতাম প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে।